ঢাকা ০৪:৫০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
৮ম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষা সিলেবাস ২০২৫ Pdf | Class 8 Bitti Exam 2025 Syllabus Trust Bank Ltd-এ “Officer (MIS)” পদে নিয়োগ, Retail Finance Centre এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষা ২০২৬: কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা, আসন সংখ্যায় বড় পরিবর্তন মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি: শেষ মুহূর্তের রিভিশন ও মানসিক শক্তি ধরে রাখার কৌশল সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫-২৬: জিপিএ ৩.০০ পেলেই আবেদনের সুযোগ বিপিএল ২০২৫ সময়সূচি প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর সিলেটে শুরু, ফাইনাল ২৩ জানুয়ারি ঢাকায় কৃষকের ভাষায় মাটি কাকে বলে? মাটির প্রকারভেদ ও চেনার সহজ উপায় পুঁজিবাদ কাকে বলে? পুঁজিবাদের সংজ্ঞা, প্রধান ৭টি বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা-অসুবিধা এমপিও নীতিমালা ২০২৫: শিক্ষকদের অন্য চাকরি নিষিদ্ধ, ১০ বছরে পদোন্নতির সুখবর দাখিল রেজিস্ট্রেশন নবায়ন ২০২৬: এক বিষয়ে অকৃতকার্যদের পরীক্ষার সুযোগ ও ফি জমার নিয়ম এইচএসসি বৃত্তি ফলাফল ২০২৫ প্রকাশ: ঢাকা বোর্ডের তালিকা ও টাকা তোলার নিয়ম

What is Capitalism? Definition and Characteristics in Bengali

পুঁজিবাদ কাকে বলে? পুঁজিবাদের সংজ্ঞা, প্রধান ৭টি বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা-অসুবিধা

অনাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৩:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ১২ বার পড়া হয়েছে

পুঁজিবাদ কাকে বলে—এটি অর্থনীতির ছাত্র কিংবা সাধারণ মানুষ সবার জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে চলছে। আমরা যে মুক্ত বাজার, ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং মুনাফার কথা বলি, তার মূলে রয়েছে এই পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজম (Capitalism)।

সহজ কথায়, পুঁজিবাদ হলো এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে দেশের সম্পদ এবং উৎপাদনের উপাদানগুলো সরকারের হাতে না থেকে ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এখানে ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘মুনাফা অর্জন’। আজকের আর্টিকেলে আমরা পুঁজিবাদের সংজ্ঞা, এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং এটি কীভাবে কাজ করে তা বিস্তারিত আলোচনা করব।

পুঁজিবাদ কাকে বলে?

পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র হলো এমন একটি অর্থব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণ (যেমন: ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন) ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এই ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের আশায় অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, “পুঁজিবাদ হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, মুনাফার উদ্দেশ্য এবং অবাধ বাজার প্রতিযোগিতা অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।”

এখানে সরকার বা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ খুবই কম থাকে। বাজার নিজেই চাহিদা ও যোগানের (Demand and Supply) মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং কানাডার অর্থনীতিকে প্রধানত পুঁজিবাদী অর্থনীতি বলা হয়।

পুঁজিবাদের প্রধান ৭টি বৈশিষ্ট্য

পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে সমাজতন্ত্র বা ইসলামী অর্থব্যবস্থা থেকে আলাদা করে। নিচে পুঁজিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:

১. ব্যক্তিগত মালিকানা

পুঁজিবাদের প্রধান স্তম্ভ হলো ব্যক্তিগত মালিকানা। এখানে কল-কারখানা, জমি, খনি বা যন্ত্রপাতির মালিক কোনো সরকার নয়, বরং সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা। ব্যক্তি তার সম্পদ ইচ্ছামতো ব্যবহার, হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারে।

২. মুনাফার উদ্দেশ্য

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য হলো ‘মুনাফা’। একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী পণ্য উৎপাদন করেন বা সেবা দেন শুধুমাত্র লাভ করার আশায়। এখানে সমাজসেবার চেয়ে ব্যক্তিগত লাভকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

৩. উদ্যোগের স্বাধীনতা

এই ব্যবস্থায় যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো বৈধ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কে কী উৎপাদন করবে, কোথায় বিক্রি করবে এবং কত দামে বিক্রি করবে—এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যক্তির থাকে। সরকার এখানে কোনো বাধা দেয় না।

৪. অবাধ প্রতিযোগিতা

পুঁজিবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিযোগিতা। যেহেতু বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত, তাই অনেক বিক্রেতা একই পণ্য নিয়ে বাজারে আসে। ফলে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে পণ্যের মান বাড়াতে এবং দাম কমাতে বাধ্য হয়। এতে দিনশেষে ভোক্তারা লাভবান হয়।

৫. ভোক্তার সার্বভৌমত্ব

পুঁজিবাদী বাজারে ‘ভোক্তাই রাজা’। ভোক্তারা যা চায়, উৎপাদকরা সেটাই তৈরি করে। কারণ উৎপাদকদের লাভ নির্ভর করে ভোক্তাদের পছন্দের ওপর। ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

৬. বাজার ও দাম ব্যবস্থা

এখানে সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় না। পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। বাজারে যদি কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়ে কিন্তু যোগান কম থাকে, তবে দাম বাড়বে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমবে। একে বলা হয় ‘অদৃশ্য হাত’ (Invisible Hand), যা অ্যাডাম স্মিথ উল্লেখ করেছিলেন।

৭. শ্রমিক শোষণ ও শ্রেণী বিভাজন

পুঁজিবাদের একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণী বৈষম্য। এখানে সমাজ প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যায়—

  • পুঁজিপতি বা মালিক শ্রেণী: যারা সম্পদের মালিক।

  • শ্রমিক শ্রেণী: যারা তাদের শ্রম বিক্রি করে বেঁচে থাকে। অনেক সময় মালিকরা বেশি মুনাফার আশায় শ্রমিকদের কম মজুরি দেন, ফলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তৈরি হয়।

পুঁজিবাদের সুবিধা ও অসুবিধা

কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই শতভাগ নিখুঁত নয়। পুঁজিবাদেরও ভালো এবং মন্দ—উভয় দিক রয়েছে।

সুবিধা:

  • উৎপাদন বৃদ্ধি: মুনাফার আশায় মানুষ বেশি পরিশ্রম করে, ফলে দেশের উৎপাদন বাড়ে।

  • প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলো নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।

  • দক্ষতা বৃদ্ধি: সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং অপচয় কমে।

অ অসুবিধা:

  • সম্পদের অসম বন্টন: ধনীরা আরও ধনী হয় এবং গরিবরা আরও গরিব হয়।

  • একচেটিয়া বাজার: বড় কোম্পানিগুলো ছোট কোম্পানিগুলোকে গ্রাস করে মনোপলি (Monopoly) তৈরি করতে পারে।

  • জনস্বার্থ উপেক্ষা: যেসব পণ্যে লাভ কম কিন্তু মানুষের জন্য জরুরি, পুঁজিপতিরা সেসব পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ দেখায় না।

আধুনিক বিশ্বে বিশুদ্ধ পুঁজিবাদ বা বিশুদ্ধ সমাজতন্ত্র খুব একটা দেখা যায় না। বরং বেশিরভাগ দেশই ‘মিশ্র অর্থনীতি’ (Mixed Economy) অনুসরণ করে, যেখানে পুঁজিবাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সাথে সরকারি নিয়ম-নীতির সমন্বয় থাকে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে পুঁজিবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. পুঁজিবাদের জনক কে? স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)-কে আধুনিক পুঁজিবাদের জনক বলা হয়। ১৭৭৬ সালে তার লেখা বই ‘The Wealth of Nations’-এ তিনি এই ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো তুলে ধরেন।

২. বাংলাদেশ কি পুঁজিবাদী দেশ? বাংলাদেশ মূলত একটি মিশ্র অর্থনীতির দেশ। এখানে ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানাও রয়েছে। তবে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অনেকটাই পুঁজিবাদী কাঠামোর দিকে ঝুঁকছে।

৩. পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী? পুঁজিবাদের মূল কথা হলো ‘ব্যক্তিগত মালিকানা ও মুনাফা’। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমাজকল্যাণ’। সমাজতন্ত্রে সম্পদের মালিক হয় রাষ্ট্র।

৪. মুক্ত বাজার অর্থনীতি কী? মুক্ত বাজার অর্থনীতি হলো পুঁজিবাদেরই একটি রূপ, যেখানে পণ্যের দাম ও উৎপাদন সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বাজারের চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে চলে।

৫. পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? অর্থনৈতিক বৈষম্য বা ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান সৃষ্টি হওয়াই পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমালোচনা বা সমস্যা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :

What is Capitalism? Definition and Characteristics in Bengali

পুঁজিবাদ কাকে বলে? পুঁজিবাদের সংজ্ঞা, প্রধান ৭টি বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা-অসুবিধা

আপডেট সময় : ০৪:৪৩:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

পুঁজিবাদ কাকে বলে—এটি অর্থনীতির ছাত্র কিংবা সাধারণ মানুষ সবার জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ দেশই এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে চলছে। আমরা যে মুক্ত বাজার, ব্যক্তিগত ব্যবসা এবং মুনাফার কথা বলি, তার মূলে রয়েছে এই পুঁজিবাদ বা ক্যাপিটালিজম (Capitalism)।

সহজ কথায়, পুঁজিবাদ হলো এমন এক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা যেখানে দেশের সম্পদ এবং উৎপাদনের উপাদানগুলো সরকারের হাতে না থেকে ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এখানে ব্যবসার মূল উদ্দেশ্য হলো ‘মুনাফা অর্জন’। আজকের আর্টিকেলে আমরা পুঁজিবাদের সংজ্ঞা, এর প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং এটি কীভাবে কাজ করে তা বিস্তারিত আলোচনা করব।

পুঁজিবাদ কাকে বলে?

পুঁজিবাদ বা ধনতন্ত্র হলো এমন একটি অর্থব্যবস্থা যেখানে উৎপাদনের যাবতীয় উপকরণ (যেমন: ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন) ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকে। এই ব্যবস্থায় ব্যক্তি তার নিজের স্বার্থে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা লাভের আশায় অবাধে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের ভাষায়, “পুঁজিবাদ হলো এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে ব্যক্তিগত সম্পত্তি, মুনাফার উদ্দেশ্য এবং অবাধ বাজার প্রতিযোগিতা অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে।”

এখানে সরকার বা রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ খুবই কম থাকে। বাজার নিজেই চাহিদা ও যোগানের (Demand and Supply) মাধ্যমে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং কানাডার অর্থনীতিকে প্রধানত পুঁজিবাদী অর্থনীতি বলা হয়।

পুঁজিবাদের প্রধান ৭টি বৈশিষ্ট্য

পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা একে সমাজতন্ত্র বা ইসলামী অর্থব্যবস্থা থেকে আলাদা করে। নিচে পুঁজিবাদের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা করা হলো:

১. ব্যক্তিগত মালিকানা

পুঁজিবাদের প্রধান স্তম্ভ হলো ব্যক্তিগত মালিকানা। এখানে কল-কারখানা, জমি, খনি বা যন্ত্রপাতির মালিক কোনো সরকার নয়, বরং সাধারণ জনগণ বা ব্যবসায়ীরা। ব্যক্তি তার সম্পদ ইচ্ছামতো ব্যবহার, হস্তান্তর বা বিক্রি করতে পারে।

২. মুনাফার উদ্দেশ্য

পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মূল লক্ষ্য হলো ‘মুনাফা’। একজন উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী পণ্য উৎপাদন করেন বা সেবা দেন শুধুমাত্র লাভ করার আশায়। এখানে সমাজসেবার চেয়ে ব্যক্তিগত লাভকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

৩. উদ্যোগের স্বাধীনতা

এই ব্যবস্থায় যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো বৈধ ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কে কী উৎপাদন করবে, কোথায় বিক্রি করবে এবং কত দামে বিক্রি করবে—এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্ণ স্বাধীনতা ব্যক্তির থাকে। সরকার এখানে কোনো বাধা দেয় না।

৪. অবাধ প্রতিযোগিতা

পুঁজিবাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিযোগিতা। যেহেতু বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত, তাই অনেক বিক্রেতা একই পণ্য নিয়ে বাজারে আসে। ফলে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে পণ্যের মান বাড়াতে এবং দাম কমাতে বাধ্য হয়। এতে দিনশেষে ভোক্তারা লাভবান হয়।

৫. ভোক্তার সার্বভৌমত্ব

পুঁজিবাদী বাজারে ‘ভোক্তাই রাজা’। ভোক্তারা যা চায়, উৎপাদকরা সেটাই তৈরি করে। কারণ উৎপাদকদের লাভ নির্ভর করে ভোক্তাদের পছন্দের ওপর। ভোক্তার চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ও বন্টন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়।

৬. বাজার ও দাম ব্যবস্থা

এখানে সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয় না। পণ্যের দাম নির্ধারিত হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে। বাজারে যদি কোনো পণ্যের চাহিদা বাড়ে কিন্তু যোগান কম থাকে, তবে দাম বাড়বে। আবার চাহিদা কমলে দাম কমবে। একে বলা হয় ‘অদৃশ্য হাত’ (Invisible Hand), যা অ্যাডাম স্মিথ উল্লেখ করেছিলেন।

৭. শ্রমিক শোষণ ও শ্রেণী বিভাজন

পুঁজিবাদের একটি নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য হলো শ্রেণী বৈষম্য। এখানে সমাজ প্রধানত দুটি শ্রেণীতে ভাগ হয়ে যায়—

  • পুঁজিপতি বা মালিক শ্রেণী: যারা সম্পদের মালিক।

  • শ্রমিক শ্রেণী: যারা তাদের শ্রম বিক্রি করে বেঁচে থাকে। অনেক সময় মালিকরা বেশি মুনাফার আশায় শ্রমিকদের কম মজুরি দেন, ফলে সমাজে ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য তৈরি হয়।

পুঁজিবাদের সুবিধা ও অসুবিধা

কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাই শতভাগ নিখুঁত নয়। পুঁজিবাদেরও ভালো এবং মন্দ—উভয় দিক রয়েছে।

সুবিধা:

  • উৎপাদন বৃদ্ধি: মুনাফার আশায় মানুষ বেশি পরিশ্রম করে, ফলে দেশের উৎপাদন বাড়ে।

  • প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কোম্পানিগুলো নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে।

  • দক্ষতা বৃদ্ধি: সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং অপচয় কমে।

অ অসুবিধা:

  • সম্পদের অসম বন্টন: ধনীরা আরও ধনী হয় এবং গরিবরা আরও গরিব হয়।

  • একচেটিয়া বাজার: বড় কোম্পানিগুলো ছোট কোম্পানিগুলোকে গ্রাস করে মনোপলি (Monopoly) তৈরি করতে পারে।

  • জনস্বার্থ উপেক্ষা: যেসব পণ্যে লাভ কম কিন্তু মানুষের জন্য জরুরি, পুঁজিপতিরা সেসব পণ্য উৎপাদনে আগ্রহ দেখায় না।

আধুনিক বিশ্বে বিশুদ্ধ পুঁজিবাদ বা বিশুদ্ধ সমাজতন্ত্র খুব একটা দেখা যায় না। বরং বেশিরভাগ দেশই ‘মিশ্র অর্থনীতি’ (Mixed Economy) অনুসরণ করে, যেখানে পুঁজিবাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সাথে সরকারি নিয়ম-নীতির সমন্বয় থাকে। তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে পুঁজিবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ)

১. পুঁজিবাদের জনক কে? স্কটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ (Adam Smith)-কে আধুনিক পুঁজিবাদের জনক বলা হয়। ১৭৭৬ সালে তার লেখা বই ‘The Wealth of Nations’-এ তিনি এই ব্যবস্থার মূলনীতিগুলো তুলে ধরেন।

২. বাংলাদেশ কি পুঁজিবাদী দেশ? বাংলাদেশ মূলত একটি মিশ্র অর্থনীতির দেশ। এখানে ব্যক্তিগত মালিকানার পাশাপাশি সরকারি মালিকানাও রয়েছে। তবে বর্তমান বাজার ব্যবস্থা অনেকটাই পুঁজিবাদী কাঠামোর দিকে ঝুঁকছে।

৩. পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য কী? পুঁজিবাদের মূল কথা হলো ‘ব্যক্তিগত মালিকানা ও মুনাফা’। অন্যদিকে সমাজতন্ত্রের মূল কথা হলো ‘রাষ্ট্রীয় মালিকানা ও সমাজকল্যাণ’। সমাজতন্ত্রে সম্পদের মালিক হয় রাষ্ট্র।

৪. মুক্ত বাজার অর্থনীতি কী? মুক্ত বাজার অর্থনীতি হলো পুঁজিবাদেরই একটি রূপ, যেখানে পণ্যের দাম ও উৎপাদন সরকারের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই বাজারের চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে চলে।

৫. পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? অর্থনৈতিক বৈষম্য বা ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান সৃষ্টি হওয়াই পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড় সমালোচনা বা সমস্যা।