বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের নিয়ম ২০২৫ নতুন নীতিমালা
- আপডেট সময় : ০৭:৫৪:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫ ৫১ বার পড়া হয়েছে
২০২৫ সালে বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের নিয়ম ২০২৫ নিয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে। সরকার এখন আরও সহজ, নিরাপদ ও বৈধ উপায়ে ফ্রিল্যান্সারদের আয় দেশে আনতে নতুন নীতিমালা চালু করেছে। ফ্রিল্যান্সাররা এখন ব্যাংক, অনুমোদিত মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস (MFS) এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক গেটওয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স গ্রহণ করতে পারবেন। আমি নিজেও একজন ফ্রিল্যান্সার হিসেবে এই পরিবর্তনগুলো ঘনিষ্ঠভাবে দেখেছি, এবং আজ আপনাকে সেই বাস্তব অভিজ্ঞতার সঙ্গে সরকারি তথ্য মিলিয়ে সব কিছু সহজভাবে জানাবো।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্সের গুরুত্ব
বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ ফ্রিল্যান্সিং দেশগুলোর একটি।
প্রায় ৮ লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করে বিদেশি মুদ্রা দেশে পাঠাচ্ছেন। এই বৈদেশিক আয়ের বড় অংশই আসে রেমিট্যান্সের মাধ্যমে। যা দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনে।
উদাহরণ হিসেবে বলি আমি নিজে Fiverr থেকে ডলার আয় করি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আনলে দেখি, সরকার এখন ২.৫% বোনাসও দিচ্ছে।
বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের নিয়ম ২০২৫
২০২৫ সালের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সারদের বৈদেশিক আয় গ্রহণ করতে হলে বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল বা অনুমোদিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে হবে।বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী, ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের মূল নিয়মগুলো হলোঃ
- বৈধ ব্যাংক বা লাইসেন্সপ্রাপ্ত মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ব্যবহার করতে হবে।
- রেমিট্যান্স আসলে সরাসরি ডলার অ্যাকাউন্টে জমা হবে।
- চাইলে Tk অ্যাকাউন্টে কনভার্ট করে তোলা যাবে।
- মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিসেও (যেমন বিকাশ, নগদ, ট্যাপ) নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাওয়া যাবে।
এই নিয়মে মূল লক্ষ্য হলো – হুন্ডির মতো অবৈধ পথে টাকা না এনে, সরকারি নীতিমালা অনুসারে বৈধভাবে দেশে আনা।
নতুন নীতিমালার মূল দিকগুলো
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫ সালে ফ্রিল্যান্স রেমিট্যান্স নিয়ে যেসব পরিবর্তন এনেছে –
- ফ্রিল্যান্স ইনকাম এখন “রেমিট্যান্স ইনকাম” হিসেবে গৃহীত হবে।
- ব্যাংকগুলোর কাছে ফ্রিল্যান্স আয়ের প্রমাণপত্র দিতে হবে (যেমন Payoneer Statement, Upwork Report)।
- রেমিট্যান্স গ্রহণে উৎসাহ দিতে সরকার ২.৫% প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে।
- ফ্রিল্যান্স ইনকাম করমুক্ত রাখার বিষয়টি পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে।
ফ্রিল্যান্স ইনকাম বৈধভাবে দেশে আনার উপায়
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি – বৈধভাবে রেমিট্যান্স আনতে সবচেয়ে ভালো তিনটি উপায় হলোঃ
Payoneer বা Wise ব্যবহার
Payoneer বাংলাদেশের প্রায় সব বড় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত।
আপনি Fiverr, Upwork, Toptal বা Freelancer থেকে Payoneer-এ আয় পাঠিয়ে পরে ব্যাংকে ট্রান্সফার করতে পারেন।
ব্যাংক ট্রান্সফার
যাদের ডলার অ্যাকাউন্ট আছে, তারা সরাসরি ব্যাংকে রেমিট্যান্স নিতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ: ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, এবং সিটি ব্যাংক ফ্রিল্যান্স রেমিট্যান্সে দ্রুত সেবা দেয়।
মোবাইল ফাইন্যান্স সার্ভিস (MFS)
২০২৫ সালে বিকাশ, নগদ, রকেট, ট্যাপসহ কয়েকটি সার্ভিস বৈধ রেমিট্যান্সে অনুমোদন পেয়েছে। তবে একবারে সর্বোচ্চ $1,000 পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য।
ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম
ডলার অ্যাকাউন্ট খুলতে প্রয়োজন হবে –
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- পাসপোর্ট কপি (যদি থাকে)
- অনলাইন ইনকামের প্রমাণ (Upwork/ Fiverr/ Payoneer Screenshot)
ব্যাংক কর্মকর্তাদের জানান যে আপনি “ফ্রিল্যান্সার রেমিট্যান্স অ্যাকাউন্ট” খুলতে চান। এতে কর ছাড় ও প্রণোদনা সুবিধা পেতে কোনো সমস্যা হবে না।
ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স প্রণোদনা ২০২৫
২০২৫ সালেও সরকার রেমিট্যান্সে ২.৫% বোনাস দিচ্ছে। অর্থাৎ, যদি আপনি $1,000 পাঠান, তাহলে অতিরিক্ত $25 টাকায় যুক্ত হবে। এই প্রণোদনা সরাসরি আপনার ব্যাংক বা MFS অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
হুন্ডি বা অবৈধ চ্যানেলের ঝুঁকি
অনেকে দ্রুত টাকা পাওয়ার আশায় হুন্ডি ব্যবহার করেন – কিন্তু এটা ঝুঁকিপূর্ণ ও বেআইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, অবৈধভাবে রেমিট্যান্স গ্রহণ করলে জরিমানা ও আইনি ব্যবস্থা হতে পারে। তাছাড়া, হুন্ডির মাধ্যমে টাকা না এলে আপনি সরকারের প্রণোদনা সুবিধাও হারাবেন।
সাধারণ ভুল ও সমাধান
- Payoneer ইমেইল ভুল দিলে টাকা আটকে যেতে পারে।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নাম মিল না থাকলে ট্রান্সফার ব্যর্থ হয়।
- সব সময় ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের ভেরিফাইড ইনফরমেশন ব্যবহার করুন।
আমার পরামর্শ প্রতিবার রেমিট্যান্স আসার পর ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার থেকে কনফার্মেশন নিয়ে নিন।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও ডিজিটাল ব্যাংকিং
২০২৫–৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক চালুর পরিকল্পনা করেছে। ফ্রিল্যান্সাররা তখন সরাসরি ডিজিটাল ওয়ালেট থেকেই ডলার ধরে রাখতে ও খরচ করতে পারবেন। এর ফলে আন্তর্জাতিক মার্কেটপ্লেসের সঙ্গে লেনদেন আরও সহজ হবে।
ব্যক্তিগত পরামর্শ
আমি প্রথমে রেমিট্যান্স আনতাম হুন্ডির মাধ্যমে – দ্রুত টাকা পেতাম, কিন্তু ভয়ের মধ্যে থাকতাম। পরে Payoneer ও ব্যাংক ট্রান্সফারে গেলে দেখি প্রক্রিয়াটা কিছুটা সময় নেয়, কিন্তু নিরাপদ ও বোনাসসহ আসে। এখন আমি মাসে নিয়মিত রেমিট্যান্স আনি এবং ২.৫% বোনাস পাই – এটা সত্যিই অনুপ্রেরণাদায়ক!
আমার সর্বশেষ কথা
২০২৫ সালের নতুন নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের নিয়ম এখন অনেক সহজ, নিরাপদ ও পুরস্কারমুখী। আপনি যদি বৈধ ব্যাংক বা অনুমোদিত MFS ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার আয় হবে সম্পূর্ণ বৈধ এবং আপনি সরকারের প্রণোদনা সুবিধাও পাবেন। সঠিক নিয়ম জানুন, নিয়ম মেনে আয় আনুন তবেই আপনার রেমিট্যান্স হবে দেশের উন্নয়নের অংশ।
অনার্স কোন সাবজেক্ট সহজ। আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এইখানে যান।




















