লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়
- আপডেট সময় : ০৭:২৫:২২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫ ২৯ বার পড়া হয়েছে
লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়? এই প্রশ্নটি আমাদের অনেকের মনেই জাগে, বিশেষ করে যখন হঠাৎ মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করি। লো প্রেসারে এমন কোনো খাবার পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়, তবে কিছু খাবার এড়ানো উচিত এবং কিছু খাবার খেলে শরীর দ্রুত শক্তি ফিরে পায়।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান ও নিয়মিত যত্নই লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
লো প্রেসার কী এবং কেন হয়
লো প্রেসার বা হাইপোটেনশন মানে হলো রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg এর নিচে নেমে যাওয়া। এটি নানা কারণে হতে পারে যেমন পানিশূন্যতা, অতিরিক্ত পরিশ্রম, ঘুমের অভাব, হরমোন সমস্যা, কিংবা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখেছি, গরমের দিনে পর্যাপ্ত পানি না খেলে বা না খেয়ে দীর্ঘক্ষণ থাকলে অনেকের হঠাৎ মাথা ঘোরা শুরু হয়। যা আসলে লো প্রেসারের প্রাথমিক লক্ষণ।
লো প্রেসারে কী খাওয়া উচিত
চিকিৎসকরা বলেন, লো প্রেসারে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। কিছু খাবার রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়াতে সহায়তা করে, আবার কিছু শরীরকে শক্তি জোগায়।
১. লবণযুক্ত খাবার
লো প্রেসারে হালকা লবণযুক্ত পানি বা স্যুপ খাওয়া খুব উপকারী। লবণ শরীরে সোডিয়াম সরবরাহ করে, যা রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত নয় – চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে।
২. পানি ও তরল পদার্থ
প্রতিদিন অন্তত ৮–১০ গ্লাস পানি পান করুন। গরমে বা পরিশ্রমের সময় লেবু পানি, গ্লুকোজ পানি বা ডাবের পানি খুব কার্যকর। এই পানীয়গুলো শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য রাখে।
৩. ফলমূল ও সবজি
লো প্রেসারে কলা, বিট, গাজর, ও কমলালেবু দারুণ কাজ করে। বিটে থাকে নাইট্রেট, যা রক্ত প্রবাহ উন্নত করে। এই ফল ও সবজিগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শক্তি জোগায়।
৪. প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার
ডিম, দুধ, মাছ ও ডাল লো প্রেসার রোগীদের জন্য উপকারী।
এই খাবারগুলো শরীরে আয়রন ও ভিটামিন বি১২ সরবরাহ করে।
৫. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
কফি বা চা রক্তচাপ সাময়িকভাবে বাড়াতে সাহায্য করে।
তবে অতিরিক্ত কফি খেলে বিপরীত ফল হতে পারে, তাই দিনে ১–২ কাপ যথেষ্ট।
লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়
এই প্রশ্নের উত্তর হলো – অতিরিক্ত তেল ও অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
১. তেলযুক্ত ও ভাজা খাবার
ভাজা-পোড়া খাবার শরীরে রক্ত চলাচল ব্যাহত করতে পারে। এতে শরীর ভারি লাগে এবং প্রেসার আরও নিচে নেমে যেতে পারে।
২. অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার
মিষ্টি, কোল্ড ড্রিংক, ফাস্ট ফুড এগুলো শরীরের ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্য নষ্ট করে। এছাড়া হঠাৎ ব্লাড সুগার বাড়া-কমার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
লো প্রেসার নিয়ন্ত্রণের ঘরোয়া উপায়
- সকালে উঠেই এক গ্লাস লেবু পানি খান।
- দিনে অন্তত ৭–৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাঁড়ানো এড়িয়ে চলুন।
- হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা বা যোগব্যায়াম।
- গরমের সময় স্যালাইন বা গ্লুকোজ পান করুন।
একবার আমি রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময় মাথা ঘোরা অনুভব করেছিলাম, পরে বুঝলাম সেদিন সারাদিন কিছু খাইনি। এক গ্লাস লবণ-পানি খাওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই স্বাভাবিক বোধ করি। তাই সঠিক সময়ে খাওয়া সত্যিই জরুরি।
বিশেষ সতর্কতা: কারা বেশি ঝুঁকিতে
- গর্ভবতী নারী
- বৃদ্ধ ব্যক্তি
- হার্ট বা কিডনি রোগী
- ডায়াবেটিস রোগী
এই ধরনের মানুষদের ক্ষেত্রে লো প্রেসার হলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করাই শ্রেয়। নিজে থেকে ওষুধ বা ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার না করাই ভালো।
লো প্রেসার হলে কি খাবার প্রশ্নাবলী
১. লো প্রেসারে কলা খাওয়া যায় কি?
হ্যাঁ, কলা পটাশিয়ামসমৃদ্ধ এবং এটি শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখে।
২. লো প্রেসারে চা বা কফি খাওয়া ভালো কি না?
সামান্য পরিমাণে খাওয়া যায়, তবে অতিরিক্ত খেলে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে।
৩. রক্তচাপ কমে গেলে তৎক্ষণাৎ কী করবো?
এক গ্লাস লবণ পানি বা গ্লুকোজ পানি খান এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিন।
৪. লো প্রেসার স্থায়ী হলে কী করা উচিত?
ডাক্তারের পরামর্শে পরীক্ষা করান – এটি কোনো রোগের উপসর্গ হতে পারে।
উপসংহার
লো প্রেসার কোনো মারাত্মক রোগ নয়, তবে এটি শরীরের সতর্ক সংকেত। সঠিক খাবার, পর্যাপ্ত পানি ও নিয়মিত জীবনযাপন রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। তাই এখন থেকে নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকুন, এবং মনে রাখুন – “লো প্রেসার হলে কি খাবার খাওয়া উচিত নয়” প্রশ্নের উত্তর হলো সঠিক খাবার খাওয়া ও সময়মতো যত্ন নেওয়াই আসল সমাধান।
























