পরীক্ষার হলে সময় ব্যবস্থাপনা | দেড় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল
Exam Time Management: পরীক্ষার হলে দেড় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল
- আপডেট সময় : ১০:০৬:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩ বার পড়া হয়েছে
Exam Time Management Strategy: পরীক্ষার হলে প্রবেশ করার পর আপনার মেধার চেয়েও বড় পরীক্ষা দিতে হয় আপনার স্নায়ু বা Nerves-এর। বিশেষ করে যখন পরীক্ষার সময়কাল হয় মাত্র দেড় ঘণ্টা (৯০ মিনিট)। এই স্বল্প সময়ে ১০০ বা ১২০ নম্বরের উত্তর দেওয়াটা অনেকটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মতো—প্রতিটি বল বা মিনিট এখানে গুরুত্বপূর্ণ। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীও শুধুমাত্র Poor Time Management-এর কারণে জানা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন না বা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে Negative Marking-এর ফাঁদে পড়েন।
Exam Time Management: পরীক্ষার হলে দেড় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল
একজন অভিজ্ঞ ক্যারিয়ার মেন্টর হিসেবে আমি দেখেছি, সফল পরীক্ষার্থীরা ঘড়ি ধরে পড়েন না, তারা ঘড়ি ধরে কৌশল (Strategy) সাজান। আজকের এই গাইডে আমরা জানব কীভাবে ৯০ মিনিটের প্রতিটি সেকেন্ডকে কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ আউটপুট বা Maximum Score বের করে আনা যায়।
৯০ মিনিটের গাণিতিক বিভাজন
দেড় ঘণ্টা সময়কে এলোমেলোভাবে ব্যবহার না করে একটি নির্দিষ্ট ছকে বা Framework-এ ভাগ করে নিন। আমরা একে বলি ‘15-50-25 Rule’।
| সময় বা ফেইজ | ডিউরেশন (মিনিট) | কার্যক্রম (Activity) |
| Phase 1: Scanning | প্রথম ১০ মিনিট | পুরো প্রশ্নপত্র দ্রুত দেখা এবং একদম সহজ (দেখলেই পারা যায়) প্রশ্নের উত্তর দাগানো। |
| Phase 2: Core Answering | পরবর্তী ৫০ মিনিট | মাঝারি কঠিন এবং ক্যালকুলেশন নির্ভর প্রশ্নগুলোর সমাধান করা। |
| Phase 3: Review & Risk | শেষ ২০ মিনিট | রেখে দেওয়া কঠিন প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবা এবং OMR রিভিশন দেওয়া। |
| Buffer Time | ১০ মিনিট | ওএমআর চেক এবং নাম/রোল ঠিক আছে কিনা দেখা। |
আরও পড়ুন: Negative Marking এড়ানোর ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল: জানা প্রশ্নেও কেন ভুল হয়?
৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল
১. ‘লো হ্যাঙ্গিং ফ্রুটস’ বা সহজ প্রশ্ন আগে
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র এমনভাবে তৈরি করা হয় যেখানে কঠিন এবং সহজ প্রশ্ন মেশানো থাকে।
-
ভুল: শুরুতেই ১ নম্বর প্রশ্ন থেকে সিরিয়ালি উত্তর করতে যাওয়া। ১ নম্বর প্রশ্নটি কঠিন হলে আপনার কনফিডেন্স ভেঙে যাবে।
-
সঠিক কৌশল: প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর দ্রুত চোখ বুলিয়ে জিকে (General Knowledge), বাংলা বা ইংরেজির মেমোরি বেসড প্রশ্নগুলো আগে দাগিয়ে ফেলুন। এগুলো উত্তর করতে চিন্তার প্রয়োজন হয় না, মাত্র ৫-১০ সেকেন্ড লাগে। এতে প্রথম ২০ মিনিটেই আপনার ঝুলিতে ৩০-৪০ মার্কস জমা হয়ে যাবে, যা আপনার Confidence Level বুস্ট করবে।
২. কঠিন প্রশ্নে ‘ইগো’ দেখাবেন না
গণিত বা ফিজিক্সের কোনো একটি অঙ্ক মিলছে না? ওখানেই থেমে যান।
-
Rule: কোনো এমসিকিউ সলভ করতে যদি ১ মিনিটের বেশি সময় লাগে, তবে সেটি Skip করুন। মনে রাখবেন, একটি কঠিন প্রশ্নের মানও ১, একটি সহজ প্রশ্নের মানও ১। কঠিন প্রশ্নের পেছনে ৫ মিনিট নষ্ট করার মানে হলো আপনি ৫টি সহজ প্রশ্নের সময় খেয়ে ফেললেন। এটি Suicidal। ওটাকে গোল দাগ দিয়ে পরে দেখার জন্য রেখে দিন।
৩. ওএমআর পূরণের সঠিক সময়
অনেকে সব প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রে দাগিয়ে একদম শেষে ওএমআর ভরাট করেন। এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
-
Risk: শেষ মুহূর্তে সময় না থাকলে তাড়াহুড়োয় সিরিয়াল ব্রেক হতে পারে।
-
Solution: প্রতি ৫টি বা ১০টি প্রশ্ন সলভ করার পর পর ওএমআর ভরাট করুন। অথবা এক পৃষ্ঠা শেষ হলে সেই পৃষ্ঠার উত্তরগুলো ভরাট করুন। এতে ব্রেইন কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কমে।
৪. বিষয়ভিত্তিক সময় বণ্টন
দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় বিষয়ভেদে সময় ভাগ করা জরুরি।
-
General Knowledge/Bangla: এই বিষয়গুলোতে ক্যালকুলেশন নেই। তাই এখানে প্রতি প্রশ্নে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ সেকেন্ড সময় দিন।
-
Math/Science/Accounting: এই বিষয়গুলোতে ক্যালকুলেশন আছে। এখান থেকে সময় বাঁচিয়ে গণিতের জন্য বরাদ্দ রাখুন।
-
Target: ৬০ মিনিটের মধ্যে নন-ম্যাথমেটিক্যাল সব বিষয় শেষ করার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশি ফ্রিল্যান্সারদের রেমিট্যান্স গ্রহণের নিয়ম ২০২৫ নতুন নীতিমালা
৫. শেষ ১০ মিনিটের ম্যাজিক
পরীক্ষার শেষ ১০ মিনিট নতুন কোনো কঠিন অংক কষার চেষ্টা করবেন না। এই সময়টি দিন OMR Sheet চেক করতে।
-
রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর সঠিক ভরাট করেছেন কিনা দেখুন।
-
কোনো উত্তর ভুল সিরিয়ালে দাগিয়েছেন কিনা চেক করুন।
-
১-২টি কনফিউজিং প্রশ্নে Calculated Risk নিতে পারেন (যদি কাটমার্কস নিরাপদ জোনে না থাকে)।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি ও মানসিক নিয়ন্ত্রণ
পরীক্ষার হলে সময়ের চাপ বা Time Pressure সামলানো নিয়ে myexamblog -এর ক্যারিয়ার মেন্টর প্রফেসর জহিরুল ইসলাম তার বিশ্লেষণে বলেন, “পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় শত্রু প্রশ্নপত্রের কঠিন্য নয়, বরং তাদের নিজস্ব উদ্বেগ বা Anxiety। যখনই দেখবেন কোনো প্রশ্নের উত্তর মনে পড়ছে না বা সময় চলে যাচ্ছে, তখন ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস (Deep Breath) নিন। এটি মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ায় এবং প্যানিক অ্যাটাক কমায়।”
তিনি আরও পরামর্শ দেন, “দেড় ঘণ্টার পরীক্ষায় ঘড়ির দিকে বারবার তাকানো যাবে না। প্রতি ৩০ মিনিট পর একবার সময় চেক করুন। বারবার ঘড়ি দেখলে মস্তিষ্কে ভয়ের সঞ্চার হয়, যা জানা উত্তরও ভুল করিয়ে দেয়। আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত—যত দ্রুত সম্ভব ১০০% নিশ্চিত উত্তরগুলো শেষ করা।”
Exam Time Management কোনো জাদুর কাঠি নয়, এটি অভ্যাসের ব্যাপার। পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে বাসায় ঘড়ি ধরে ৯০ মিনিটের মডেল টেস্ট দিন। ওপরের কৌশলগুলো প্রয়োগ করে দেখুন আপনি নির্ধারিত সময়ের কতটুকু আগে শেষ করতে পারছেন। মনে রাখবেন, দেড় ঘণ্টায় আপনি কত বেশি লিখলেন তা গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং কত নির্ভুলভাবে উত্তর দিলেন—সেটাই আপনাকে বিজয়ী করবে।
পরীক্ষার প্রস্তুতি ও টিপস সংক্রান্ত আরও আর্টিকেল পড়তে ভিজিট করুন আমাদের ক্যারিয়ার গাইড বিভাগে।
















