Memory Hacks: পড়া মনে রাখার ৫টি জাদুকরী কৌশল ও বৈজ্ঞানিক মেথড
- আপডেট সময় : ১০:১১:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৬ বার পড়া হয়েছে
Memory Hacks বা পড়া মনে রাখার কৌশল: পরীক্ষার হলের সবচেয়ে পরিচিত দৃশ্য হলো—কলম হাতে নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা এবং ভাবা, “এই পয়েন্টটা তো গতকালই পড়েছিলাম, এখন কেন মনে পড়ছে না?” আমরা প্রায়ই ভাবি আমাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল, কিন্তু বিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। সমস্যা আপনার মেমোরিতে নয়, সমস্যা আপনার পড়ার পদ্ধতিতে (Study Method)।
একজন ক্যারিয়ার মেন্টর হিসেবে আমি দেখেছি, শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইয়ের ওপর মুখ গুঁজে বসে থাকে, যাকে বলা হয় Passive Learning। এটি পড়া মনে রাখার সবচেয়ে অকার্যকর উপায়। ২০২৬ সালের এই স্মার্ট যুগে আপনাকে পড়তে হবে স্মার্টলি। আজকের গাইডে আমরা মস্তিষ্কের নিউরোসায়েন্স ব্যবহার করে পড়া মনে রাখার ৫টি বিশ্বখ্যাত ‘জাদুকরী’ কৌশল বা Hacks আলোচনা করব।
১. স্পেসড রিপিটেশন (Spaced Repetition): ভোলার আগেই রিভিশন
জার্মান মনোবিজ্ঞানী হারম্যান এভিংহাউসের ‘Forgetting Curve’ অনুযায়ী, আমরা যা পড়ি তার ৫০% এক ঘণ্টার মধ্যে এবং ৭০% ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভুলে যাই। এই ভুলে যাওয়া রোধ করার একমাত্র উপায় হলো Spaced Repetition।
-
পদ্ধতি: একটি পড়া একটানা ৫ ঘণ্টা না পড়ে, সেটি ভেঙে ভেঙে ৫ দিনে ১ ঘণ্টা করে পড়ুন।
-
শিডিউল:
-
১ম রিভিউ: পড়ার ১ ঘণ্টা পর।
-
২য় রিভিউ: ২৪ ঘণ্টা পর।
-
৩য় রিভিউ: ৩ দিন পর।
-
৪র্থ রিভিউ: ১ সপ্তাহ পর।
-
-
ফলাফল: এই পদ্ধতিতে তথ্যগুলো আপনার Short-term Memory থেকে Long-term Memory-তে স্থানান্তরিত হবে।
২. অ্যাক্টিভ রিকল (Active Recall): নিজেকে যাচাই করা
আমরা সাধারণত বই খুলে বারবার রিডিং পড়ি। এটি মস্তিষ্কে মিথ্যে ধারণা দেয় যে “আমি তো এটা পারি”। কিন্তু বই বন্ধ করলেই সব শেষ।
-
কৌশল: একটি প্যারা পড়ার পর বই বন্ধ করুন। চোখ বন্ধ করে নিজেকে প্রশ্ন করুন—”আমি কী পড়লাম?” এবং না দেখে বলার চেষ্টা করুন।
-
কেন কাজ করে: যখন আপনি মস্তিষ্ককে জোর করে তথ্য মনে করতে বাধ্য করেন, তখন নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী হয়। এটি পরীক্ষার হলে মনে করার সেরা প্র্যাকটিস।
আরও পড়ুন: Exam Time Management: পরীক্ষার হলে দেড় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল
৩. দ্য ফাইনম্যান টেকনিক (The Feynman Technique)
নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের এই টেকনিকটি জটিল বিষয় মনে রাখার জন্য সেরা। তিনি বলতেন, “যদি আপনি কোনো বিষয় সহজ করে অন্যকে বোঝাতে না পারেন, তার মানে আপনি নিজেই সেটি বোঝেননি।”
-
ধাপ ১: টপিকটি পড়ুন।
-
ধাপ ২: কল্পনা করুন আপনার সামনে ১০ বছরের একটি বাচ্চা বসে আছে। তাকে সহজ ভাষায় বিষয়টি বোঝান।
-
ধাপ ৩: যেখানে আটকে যাচ্ছেন, বই খুলে সেই অংশটি আবার দেখে নিন।
-
লাভ: এটি আপনার ধারণার অস্পষ্টতা বা Gap গুলো ধরিয়ে দেয়।
৪. মাল্টিসেন্সরি লার্নিং (Multisensory Learning)
শুধুমাত্র চোখের দেখা দিয়ে পড়লে মনে রাখা কঠিন। মস্তিষ্কের একাধিক ইন্দ্রিয় বা Senses ব্যবহার করলে স্মৃতি গেঁথে যায়।
-
See it: পড়ার সময় ডায়াগ্রাম, চার্ট বা মাইন্ড ম্যাপ (Mind Map) আঁকুন।
-
Say it: জোরে জোরে শব্দ করে পড়ুন (Auditory learning)।
-
Write it: পড়ার পর মূল পয়েন্টগুলো লিখে ফেলুন। গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ করার চেয়ে হাতে লিখলে মনে থাকে বেশি।
৫. নেমোনিক ও চঙ্কিং (Mnemonics & Chunking)
বড় তথ্য বা তালিকা মনে রাখার জন্য এই হ্যাকটি জাদুর মতো কাজ করে।
-
নেমোনিক (Mnemonic): তথ্যের আদ্যক্ষর দিয়ে শব্দ তৈরি করা। যেমন: রংধনুর ৭টি রং মনে রাখতে আমরা ‘বেনীআসহকলা’ (VIBGYOR) ব্যবহার করি।
-
চঙ্কিং (Chunking): বড় সংখ্যা বা তথ্যকে ছোট টুকরোয় ভাগ করা। যেমন: মোবাইল নম্বর ০১৭১১-৮৯-৪৩-২১ এভাবে মনে রাখা সহজ, একবারে ০১৭১১৮৯৪৩২১ মনে রাখা কঠিন।
আরও পড়ুন:
শেষ মুহূর্তের টিপস: মস্তিষ্কের জ্বালানি
পড়ার কৌশল ঠিক থাকলেও যদি মস্তিষ্কের হার্ডওয়্যার ঠিক না থাকে, তবে লাভ হবে না। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে আগামী পথ-এর ক্যারিয়ার মেন্টর প্রফেসর নজরুল ইসলাম কিছু জীবনযাত্রার পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “মেমোরি কনসোলিডেশন বা স্মৃতি পাকাপোক্ত করার কাজটি হয় ঘুমের মধ্যে। পরীক্ষার আগের রাতে না ঘুমানো বা ‘অল-নাইটার’ (All-nighter) দেওয়া হলো সবচেয়ে বড় ভুল। অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা গভীর ঘুম আপনার সারাদিনের পড়াকে ব্রেইনে ‘সেভ’ করতে সাহায্য করে।”
তিনি আরও যোগ করেন যে, পড়ার সময় প্রতি ২৫-৩০ মিনিট পর ৫ মিনিটের বিরতি নেওয়া (যাকে Pomodoro Technique বলে) মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। একটানা পড়লে মস্তিষ্কের ‘ফোকাস মাসল’ ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
ভালো মেমোরি কোনো উপহার নয়, এটি একটি দক্ষতা যা অর্জন করতে হয়। ওপরের ৫টি Memory Hacks-এর মধ্যে অন্তত দুটি আজ থেকেই আপনার পড়ার রুটিনে যুক্ত করুন। দেখবেন, পড়া মনে রাখা আর কঠিন কোনো সংগ্রাম নয়, বরং একটি উপভোগ্য প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে।
লেখক পরিচিতি: প্রফেসর জহিরুল ইসলাম ক্যারিয়ার মেন্টর
















