Exam Strategy: নেগেটিভ মার্কিং এড়ানোর ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল: জানা প্রশ্নেও কেন ভুল হয়?
- আপডেট সময় : ১০:১৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে
নেগেটিভ মার্কিং এড়ানোর কৌশল: প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে অনেক পরীক্ষার্থীই আফসোস করেন—”ইশ! এই সহজ প্রশ্নটা আমি জানতাম, কিন্তু তাড়াহুড়োয় ভুল দাগিয়ে এসেছি।” এই দৃশ্যটি অত্যন্ত পরিচিত। বিসিএস (BCS) বা ব্যাংক জবের মতো হাই-ভোল্টেজ পরীক্ষায় ০.৫০ বা ০.২৫ নম্বরের Negative Marking আপনার সারা বছরের পরিশ্রমকে ধূলিসাৎ করে দিতে পারে।
একজন ক্যারিয়ার মেন্টর হিসেবে আমি দেখেছি, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় যতটা জোর দেন, পরীক্ষার হলের ‘Risk Management’-এ ততটা জোর দেন না। অথচ, ১০০টি সঠিক উত্তর দেওয়ার চেয়ে ১০টি ভুল উত্তর না দেওয়া অনেক বেশি বুদ্ধিমত্তার কাজ। আজকের গাইডে আমরা জানব জানা প্রশ্নে কেন ভুল হয় (Psychology of Errors) এবং কীভাবে বৈজ্ঞানিক উপায়ে এই ফাঁদ থেকে বাঁচা যায়।
কেন জানা প্রশ্নেও ভুল হয়? (The Psychology of Errors)
নেগেটিভ মার্কিং এড়াতে হলে আগে বুঝতে হবে ভুলের উৎস কোথায়। এটি সাধারণত জ্ঞানের অভাব নয়, বরং Psychological Trap।
১. প্রশ্ন পুরোপুরি না পড়া (The Reading Trap)
সবচেয়ে বেশি ভুল হয় প্রশ্নের শেষ শব্দটি খেয়াল না করায়।
-
Scenario: প্রশ্নে ছিল “নিচের কোনটি রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস নয়?”। আপনি উত্তেজনার বশে ‘রবীন্দ্রনাথ’ এবং ‘উপন্যাস’ দেখেই প্রথম অপশনে থাকা ‘চোখের বালি’-তে দাগ দিয়ে দিলেন। অথচ সঠিক উত্তর হতো শেষের অপশনটি।
-
Result: আপনি ১ নম্বর তো পেলেনই না, উল্টো ০.৫০ হারালেন।
২. অতি-আত্মবিশ্বাস (Overconfidence Effect)
সহজ প্রশ্ন দেখলে মস্তিষ্কে Dopamine ক্ষরণ হয় এবং আমরা দ্রুত উত্তর দিতে চাই। এই তাড়াহুড়োয় ‘A’ এর জায়গায় ভুলে ‘B’ বৃত্ত ভরাট করে ফেলি। একে বলা হয় ‘Silly Mistake’।
৩. কনফার্মেশন বায়াস (Confirmation Bias)
অনেক সময় আমরা অপশনগুলো ভালো করে না পড়েই নিজের মনের মতো উত্তর খুঁজতে থাকি। এর ফলে কাছাকাছি ভুল উত্তরটি সঠিক মনে হয়।
আরও পড়ুন: Exam Time Management: পরীক্ষার হলে দেড় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ নম্বর তোলার কৌশল
নেগেটিভ মার্কিং কমানোর ৫টি বৈজ্ঞানিক কৌশল (Strategic Methods)
পরীক্ষার হলে ভুল কমানোর জন্য নিচের কৌশলগুলো ধাপে ধাপে অনুশীলন করুন:
কৌশল ১: প্রসেস অফ এলিমিনেশন (Process of Elimination)
সরাসরি সঠিক উত্তর খোঁজার বদলে, আগে ভুল উত্তরগুলো বাদ দিন।
-
Method: ৪টি অপশনের মধ্যে আপনি নিশ্চিত যে ২টি অপশন ভুল। বাকি ২টির মধ্যে একটি সঠিক। তখন Calculated Risk নেওয়া যায়।
-
Benefit: এতে সঠিক উত্তর বের করার সম্ভাবনা ২৫% থেকে বেড়ে ৫০%-এ উন্নীত হয়।
কৌশল ২: কি-ওয়ার্ড মার্কিং (Keyword Marking)
প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর পেন্সিল দিয়ে প্রশ্নের Keywords (যেমন: কোনটি নয়, সঠিক নয়, কেবল, শুধুমাত্র) আন্ডারলাইন করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সতর্ক সংকেত বা Alert Signal পাঠাবে।
কৌশল ৩: ৩ রাউন্ড মেথড (The 3-Round Strategy)
একবারে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে যাবেন না। প্রশ্নপত্রকে ৩টি রাউন্ডে ভাগ করুন:
-
Round 1 (100% Sure): কেবল সেই প্রশ্নগুলো দাগান যা আপনি দেখামাত্রই পারেন। এখানে ভুলের সম্ভাবনা ০%।
-
Round 2 (50-50 Chance): যেগুলোতে ২টি অপশন বাদ দিয়েছেন কিন্তু বাকি ২টিতে কনফিউশন আছে, সেগুলো রিস্ক নিয়ে দাগান।
-
Round 3 (Blind Guess): এই রাউন্ডে যাবেন না। যদি আপনার Cut Marks নিরাপদ জোনে থাকে, তবে এই অংশটি পুরোপুরি Skip করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
নোট: পরীক্ষার হলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ধাপগুলো এই ফানেলের মতো—প্রশ্ন দেখা (Awareness) > যাচাই করা (Evaluation) > সঠিক উত্তর দাগানো (Purchase/Decision)।)
কৌশল ৪: ওএমআর হ্যান্ডলিং (OMR Batch Filling)
অনেক পরীক্ষার্থী সব প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নপত্রে দাগিয়ে শেষে একবারে ওএমআর পূরণ করেন। এটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
-
Risk: শেষের দিকে সময় কম থাকে, তখন সিরিয়াল মেইনটেইন করতে গিয়ে একটার উত্তর আরেকটায় দাগানোর (Serial Break) সম্ভাবনা থাকে।
-
Solution: প্রতি ৫-১০টি প্রশ্ন সমাধানের পর সাথে সাথে ওএমআর পূরণ করুন। একে বলা হয় Batch Filling Technique।
কৌশল ৫: মেন্টাল রিসেট (Breathing Technique)
পরীক্ষার্থীদের এই মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা নিয়ে আগামী পথ-এর ক্যারিয়ার মেন্টর প্রফেসর নজরুল ইসলাম বলেন, “জানা প্রশ্নে ভুল হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো মস্তিষ্কের ক্লান্তি বা Cognitive Load। পরীক্ষার মাঝপথে বা শেষদিকে আমাদের মনোযোগ কমে যায়। তাই পরীক্ষার মাঝে অন্তত ২ বার ১০ সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ করে গভীর শ্বাস (Deep Breath) নেওয়া উচিত। এতে মস্তিষ্কে অক্সিজেনের প্রবাহ বাড়ে এবং ফোকাস ফিরে আসে, যা ‘সিলি মিস্টেক’ বা ছোটখাটো ভুলগুলো কমাতে জাদুকরী ভূমিকা রাখে।”
প্রফেসর নজরুল আরও যোগ করেন যে, নেগেটিভ মার্কিং আসলে জ্ঞানের পরীক্ষা নয়, এটি লোভ সংবরণের পরীক্ষা। পরীক্ষার হলে যখন আপনি কোনো প্রশ্নের উত্তর জানেন না, তখন আপনার অবচেতন মন আপনাকে ‘গেস’ বা অনুমান করতে প্ররোচিত করে। এই প্রলোভন যে সংবরণ করতে পারে, সেই দিনশেষে বিজয়ী হয়।
(আরও পড়ুন: [Memory Hacks: পড়া মনে রাখার ৫টি জাদুকরী কৌশল])
কখন রিস্ক নেবেন? (Calculated Risk Management)
নেগেটিভ মার্কিং এড়ানো মানে এই নয় যে আপনি কিছুই দাগাবেন না। বিসিএস বা ব্যাংক জবে পাস করতে হলে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দিতেই হবে।
| পরিস্থিতি (Situation) | রিস্ক লেভেল (Risk Level) | করণীয় (Action) |
| ৪টি অপশনের ১টিও জানা নেই | খুব বেশি (High) | Skip (ছেড়ে দিন) |
| ৩টি অপশনে কনফিউশন | মাঝারি (Medium) | এড়িয়ে চলাই ভালো |
| ২টিতে কনফিউশন (৫০-৫০) | কম (Low) | অবশ্যই দাগান (পরিসংখ্যান বলে এতে লাভ বেশি) |
| ১০০% নিশ্চিত | শূন্য (Zero) | দ্রুত দাগান |
আমাদের পরামর্শ (Summary Checklist)
১. প্রশ্ন পড়ার সময় ‘না’, ‘নয়’, ‘সঠিক’ শব্দগুলো মার্ক করুন।
২. আবেগের বশে উত্তর দেবেন না, যুক্তির বশে দিন।
৩. ৮০% নিশ্চিত না হলে সেই বৃত্ত ভরাট করবেন না।
৪. পরীক্ষার হলে পাশের জনের দেখাদেখি উত্তর দাগাবেন না, তার সেট কোড ভিন্ন হতে পারে।
(উপসংহার):
মনে রাখবেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ১টি সঠিক উত্তর আপনাকে ১০ জনের সামনে এগিয়ে দেয়, কিন্তু ১টি ভুল উত্তর আপনাকে ১০০ জনের পেছনে ফেলে দেয়। তাই আপনার লক্ষ্য হোক—”বেশি দাগানো নয়, বরং নির্ভুল দাগানো”। ২০২৬ সালের পরীক্ষায় এই Scientific Strategies গুলো প্রয়োগ করে দেখুন, আপনার স্কোরে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবেই।
















